বিশেষ মতিনিধি | তারিখ: ১৭-০৩-২০১১
জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় একাধিক সাংসদের আক্রমণাত্মক ও অশালীন বক্তব্যে গতকাল বুধবার সংসদে দফায় দফায় হাউকাউ হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্পিকার আবদুল হামিদকে কিছু বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করতে হয়েছে।
আলোচনায় বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সাংসদ রেহানা আক্তার বলেন, ‘আইন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে তাঁর চিকিৎসা প্রয়োজন। সরকার বিদেশ থেকে সাংবাদিক ভাড়া করে এনে জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আষাঢ়ে গল্প বানানোর চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাদের নিয়ে আর কোনো কটূক্তি করা হলে এক্কেরে পুটু মেরে দেয়া হবে।’
এ সময় সরকারি দলের সাংসদেরা ব্যাপক হইচই শুরু করেন। স্পিকার হাতের ইশারায় তাঁদের চুপ থাকার আহ্বান জানান।
হইচই থামলে রেহানা আক্তার কোমরে শাড়ি পেঁচিয়ে পুনরায় কাইজ্যায় অবতীর্ণ হন। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজি বাদ হয়ে এখন সব টাল হয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী সবাই এখন টাল। তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজার বুঝি না—এটা বলে প্রধানমন্ত্রী পার পেয়ে যেতে পারবেন না। শেয়ারবাজারে রব উঠেছে, শেখ হাসিনা বাজিকর, সবাই মিলে তারে ধর।’ জাতীয় পার্টির্রচেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি রাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ সরকার তাঁকে চৌকিদারও করেনি। সেই দুঃখে তিনি হাফপেন্ট পরে গলায় গোলাপি স্কার্ফ বেধে মুন্নি সাহার সাথে ফষ্টিনষ্টি করেন। তেলাচুরাও পাখি আর মুন্নি সাহাও একটা মাইয়া। এরশাদের জন্য বুকটা এখন ফাইট্টা যায়।’ এ সময় আবার হট্টগোল শুরু করেন সরকারি দলের সদস্যরা। তারা বলেন, সংসদে বুক তুলে কথা বলা ঠিক নয়।
রেহানা আক্তারের বক্তব্য শেষে স্পিকার এ বক্তব্য থেকে পুটু মেরে দেওয়া ও এরশাদের সঙ্গে চৌকিদারকে জড়িয়ে দেওয়া অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করেন। মুন্নি সাহা বিষয়ক বক্তব্য নিয়ে তিনি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার আশ্বাস দিলে সংসদকক্ষ শান্ত হয়। তবে রেহানা আক্তারের বুক সংক্রান্ত বক্তব্য লিপিবদ্ধ হয়।
এরপর আলোচনায় সরকারি দলের অপু উকিল তাঁর বক্তব্যে খালেদা জিয়াকে পাগল আখ্যা দেন এবং বিরোধী দলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপক সমালোচনা করেন। মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকার অসম্মান করছে—খালেদা জিয়ার এ অভিযোগ প্রসঙ্গে অপু উকিল বলেন, ‘আপনার পাপের ভারে ১/১১ এসেছিল। উনি দল করতে চেয়েছিলেন। আপনার দুর্নীতির জন্য উনি আপনাকেই প্রথম আঘাত হেনেছিলেন। আর আজ আপনি তার পুটু বাচাতে মরিয়া।’ খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আপনি বিধবা হয়ে লাল-গোলাপি শাড়ি পরে মিথ্যাচার করেন। আপনি নারী জাতির জন্য কলঙ্ক। বিপাশা বসুও আপনাকে দেখে লজ্জা পায়, জামাকাপড় টেনেটুনে বসে।’
এ বক্তব্যের পর বিরোধীদলীয় সাংসদেরা হইচই শুরু করেন। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকার খালেদা জিয়াকে পাগল বলার বিষয়টি এক্সপাঞ্জ করেন। বিপাশা বসু সংক্রান্ত বক্তব্য তিনি আরও পরীক্ষা করবেন বলে জানতে চান, বিপাশা বসু কে? তার কোনো ওয়েবসাইট আছে কি?
বিএনপির শেখ সুজাত আলী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বলেন, ‘সংসদে আমাদের নেত্রীর শাড়ির রং নিয়ে কথা উঠেছে। আমাদের নেত্রীকে আল্লাহ নিজ হাতে বানিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। বাকি সবাইকে আল্লাহ পাক টেন্ডার দিয়ে তৈরি করিয়েছেন। সম্ভবত সেই টেন্ডার ছাত্রলীগের দখলে গিয়েছিল, তাই আজ দুনিয়ার এই হাল।’
পরে স্পিকার শাড়ি-সংক্রান্ত সব বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, সংসদে শাড়ি নিয়ে টানাটানি ভাল নহে।