লংমার্চে গেলেন এরশাদ, টোল দিলেন ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব মতিবেদক

লংমার্চে অংশ নেওয়া ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গাড়িবহর ভৈরব সেতুতে টোল দেয়নি।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কুদ্দুস মতিকণ্ঠকে বলেছেন, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বুধবার টোলের টাকা পরিশোধ করেছেন। মন্ত্রী সংসদ থেকে পাওয়া তাঁর বেতন-ভাতা একটি মাটির বেঙ্কে সঞ্চয় করতেন, সেই বেঙ্ক ভেঙ্গে ৩০ হাজার ২০০ টাকা বের করে তিনি এই টোল পরিশোধ করেন।

ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগের প্রতিবাদে এরশাদ গত শনিবার সিলেটের উদ্দেশে ঢাকা থেকে লংমার্চ শুরু করেন, ফিরে আসেন রোববার। ভৈরব সেতুতে প্রতিটি ছোট গাড়ি পারাপারের জন্য টোল নির্ধারিত আছে ১০০ টাকা। সে হিসাবে ৩০২টি গাড়ির টোল পরিশোধ করা হয়েছে। সওজ সূত্র জানায়, যাওয়ার সময় ২৬৬টি এবং ফেরার পথে ৩৬টি গাড়ির টোল হিসাবে এই অর্থ পরিশোধ করেন ওবায়দুল কাদের।

অবশ্য এরশাদ শনিবার সিলেটের জনসভায় বলেছিলেন, তাঁর লংমার্চ কর্মসূচিতে দেড় হাজার গাড়ি অংশ নিয়েছে। বহরে থাকা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট যাওয়া ও আসার পথে গড়ে প্রায় ৪০০ গাড়ি এরশাদের বহরে ছিল। ঢাকা থেকেই ২০০ গাড়ি রওনা দেয়। পথে পথে আরও গাড়ি যোগ হয়।

সওজ সূত্র জানায়, এরশাদের বহরে থাকা গাড়ি লংমার্চে যাওয়ার পথে সেতুর ভৈরব প্রান্তে টোলের জন্য দাঁড় করালে কয়েকজন নেতা-কর্মী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা টোল আদায়কারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেজা কনস্ট্রাকশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, পল্লীবন্ধু হাসলে গালে টোল পড়ে। তাকে কেন বাড়তি টোল দিতে হবে? রেজা কনস্ট্রাকশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জবাবে বলেন, ভৈরব সেতুর টোল লই ছুদুরবুদুর ছইলত ন। জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীরা টোলের পরিবর্তে রেজা কনস্ট্রাকশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এরশাদের বাগান বাড়িতে বড়দের পার্টিতে দাওয়াতের প্রলোভন দেখান। রেজা কনস্ট্রাকশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, তারা নিজেরাই বড়দের পার্টি করেন, সেই পার্টিতে দাওয়াত পেতে চাইলে এরশাদ যেন ভালোয় ভালোয় টোলের টাকা পরিশোধ করেন। রেজা কনস্ট্রাকশনের বড়দের পার্টিতে অংশগ্রহনকারিনী নারীদের নামের তালিকা শুনে এরশাদ টাকা পরে দেওয়ার আশ্বাস দিলে গাড়িবহর ছেড়ে দেওয়া হয়। রেজা কনস্ট্রাকশন সরকারের হয়ে টোল আদায় করে থাকে।

লংমার্চ শেষ করে রোববার রাতে আশুগঞ্জ প্রান্তের টোল প্লাজায় এলে টোলের জন্য আবারও গাড়িবহর দাঁড় করানো হয়। কিন্তু জাতীয় পার্টির নেতারা তখন বলেন, তাঁরা মহাজোট সরকারের অংশীদার, তাই টোল দেওয়া লাগবে না। বড়দের পার্টিতে দাওয়াতের কথা স্মরন করিয়ে দিলে তারা বলেন, জাতীয় পার্টি জাতীয় পর্যায়ে পার্টি করে, তাই বড়দের পার্টির লোভ দেখিয়ে লাভ নাই। এর পরও টোল দাবি করে গাড়ি আটকে রাখা হলে তাঁরা যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করেন। মন্ত্রী টোল ছাড়াই গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়।

গত রাতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি মতিবেদককে বলেন, এক বুক আশা লই আমি যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব গ্রহন করি। অন্যেরা পাচ বচ্ছরে যে পরিমান টেকাটুকা সংগ্রহ করে, আমাকে তাহা দুই বচ্ছরে সংগ্রহ করতে হবে। নরপিশাচ আবুল যাওয়ার আগে এই মন্ত্রনালয়ের সব পেট্রল খাইয়া হালাইছে। পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্প হচ্ছে চোখের সামনে, কিন্তু সেখান থেকে টেকাটুকা খাওয়ার রাস্তা সে বন্ধ করে রেখে গেছে। আমাকে আলতু ফালতু নদীতে আলতু ফালতু সেতু বানিয়ে টেকাটুকা খেতে হবে। এর মধ্যে এরশাদ হারামজাদা ভৈরব সেতুর টোলের টেকা মেরে পালিয়ে গেছে। সেই টেকা শোধ করতে হয় আমাকে। মন্ত্রী হয়ে টেকাটুকা খাওয়ার বদলে টেকাটুকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে চললে আমি পথের ফকির হয়ে যাব।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এই টাকা তিনি এরশাদের গলায় গামছা দিয়ে আদায় করবেন। তিনি বলেন, এরশাদ একটি অভিশাপ। খানকির পুলা ১৯৮২ সাল থেকেই দেশের জনগনের উপর একটি বোঝা স্বরুপ।

ঢাকা-সিলেট পথে ভৈরব সেতু ও হবিগঞ্জের আউশকান্দিতে বাইপাস সড়কে টোল দিতে হয়। সূত্র জানায়, এরশাদের গাড়িবহর লংমার্চে যাওয়ার পথে ভৈরব ছাড়াও আউশকান্দিতে অনেক গাড়ির টোল দেওয়া হয়নি। জাতীয় পার্টির নেতারা সেখানে টোল আদায়কারীদের বলেন, টোল সরকারের পুটকি দিয়ে ভরে দিব।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ফোনে মতিকণ্ঠের কাছে দাবি করেন, ‘টাকা কি বলদের গুয়া দিয়ে বের হয়?’ তিনি বলেন, আমরা কাউকে চান্দা দেই না। সরকারেরই উচিত উল্টা এরশাদকে টোল দেয়া। রুহুল আমিন হাওলাদার দাবি করেন, যাদের শরীর দড়ির মত পাকান, তাদের কাছ থেকে টোল আদায় নিষিদ্ধ ঘোষনা করে আইন করতে হবে।

এর আগে বিএনপির রোডমার্চের সময় টোল পরিশোধের বিষয়ে কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি। যোগাযোগ করা হলে বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুল সালাম বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর গাড়ির জন্য নিয়ম অনুযায়ী টোল দিতে হয় না। তবে তাঁর বহরের অন্য গাড়িগুলোর টোল যথারীতি পরিশোধ করা হয়েছে। বিএনপি জোট সরকার আমলে প্রচুর টেকাটুকা মেরেছে, তাই তাদের টেকার কোন অভাব নাই। তবে এরশাদের গাড়ির টোল ওবায়দুল কাদের পরিশোধ করেছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। এখন থেকে বিএনপির লংমার্চের টোলও ওবায়দুল কাদেরকে পরিশোধ করতে হবে। কেউ পাবে, কেউ পাবে না, তা হবে না, তা হবে না।

Leave a comment