বিশেষ মতিবেদক
৭০ লক্ষ টাকা যথাসময়ে হস্তগত করতে না পারার বেদনায় পদত্যেগকারী রেল মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পর কে রেল মন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে বাজারে চলছিল জোর গুজব। রেলভবন, আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়সহ মাঠে ঘাটে উচ্চারিত হচ্ছিল নানা নাম। জনমনে বিরাজ করছিল নানা সংশয়।
কিন্তু সব গুজব হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় সুত্র থেকে জানা গেছে, পরবর্তী রেল মন্ত্রী নির্ধারনে আয়োজন করা হচ্ছে বস্তা দৌড়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা মতিবেদককে জানান, অনেকেই পরবর্তী রেল মন্ত্রী হতে আগ্রহী। রেলওয়ের নানা প্রকল্প, নিয়োগ ও ক্রয় থেকে কুটি কুটি টেকা অর্জন করা সম্ভব। এই মন্ত্রনালয়ে রয়েছে বিরাট সম্ভাবনা। তাই আগ্রহী বেক্তিদের উপযুক্ত মুল্যে টিকেট ক্রয় করে বস্তা দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়ার জন্য ডাকা হবে। বস্তা দৌড়ে বিজয়ী পাবেন মন্ত্রীর পদ। যদি দুইজন প্রতিযোগী স্বল্প বেবধানে বিজয়ী হন, তাহলে বয়সে বড় প্রতিযোগীকে মন্ত্রী ও বয়সে ছোট প্রতিযোগীকে প্রতিমন্ত্রী করা হবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, এই পদ্ধতি অত্যান্ত কার্যকর। এর আগে যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন একটি দৌড় প্রতিযোগীতায় জয় লাভ করে মন্ত্রী হয়েছিলেন।
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, মন্ত্রীদের সবসময় দৌড়ের উপর থাকতে হয়। কখনও দৌড় দিয়ে এসে টেকাটুকা সামলাতে হয়। কখনও টেকাটুকা সামলে দৌড় দিতে হয়। তাই আমার সব মন্ত্রীদেরই হতে হবে দৌড়ে পারদর্শী।
এ ছাড়া প্রধান মন্ত্রী কয়েক দিন আগে শক্তিশালী বিরোধী দলও চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বিরোধী দলীয় নেতারা বছরের পর বছর টেকাটুকা মারায় বেস্ত ছিলেন বলে তাদের শরীরে শক্তি নাই। তারা এক মাইল রাস্তা পায়ে হেটে লং মার্চ করতে পারেন না। গাড়িতে চড়ে লং মার্চ করেন। বৃহত্তর জামায়াতে ইসলামীর বিএনপি শাখায় একমাত্র শক্তিশালী বেক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালু।
বস্তা দৌড় প্রতিযোগীতার কথা ছড়িয়ে পড়লে শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অনেকেই টিকেট খরিদ করে বস্তা দৌড়ে অংশ গ্রহনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমীর হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ তাদের বাড়ির ছাদে এবং নিকটস্থ জিমনেশিয়ামে বেয়াম করা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। মতিবেদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গেরাজে খালি জায়গায় বেয়ামের যন্ত্রপাতি বসিয়েছেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আমীর হোসেন আমু বলেন, সামনে নির্বাচন। হারি জিতি যাই করি, দৌড়ের উপর থাকতে হবে। তাই আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বস্তা দৌড়ের কথা জানেন না বলে মতিবেদককে জানান।
তোফায়েল আহমেদ মতিবেদককে বলেন, সুস্থ দেহে সুস্থ মন। শরীর সুস্থ রাখতে হলে দৌড়াতে হবে। তিনিও বস্তা দৌড়ের খবর জানার কথা অস্বীকার করেন।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমার সিরাজগঞ্জের বাড়ির সামনে চেংড়া পুলাপান আমাকে ধানের শীষ ডেকে দৌড়ে পালায়। এই অপমান আমি সহ্য করতে পারছি না। আমি তাদের পিছু পিছু ধাওয়া দিয়ে ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করতে চাই। তাই আমি বাড়ির গেরাজে দৌড়ের যন্ত্রপাতি বসিয়েছি। আমার জন্য দুয়া করবেন। মোহাম্মদ নাসিম বস্তা দৌড়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, তিনি এসব কিছু জানেন না।
তবে তিনজনের বাড়িতেই চট ও পাটের তৈরি বেশ কিছু বস্তা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
তথ্য প্রযুক্তি ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বস্তা দৌড়ের কথা তিনি শুনেছেন। তিনি অংশগ্রহন করতে আগ্রহী। আবুল বলেন, আমি একাই দুই তিনটা মন্ত্রনালয় চালাতে পারি, কোন বেপার না।
বৃহত্তর জামায়াতে ইসলামীর বিএনপি শাখার ভাঁড়প্রাপ্ত নায়েবে আমীর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের প্রয়াত নায়েবে আমীর খোন্দকার দেলোয়ার আজ আমাদের মাঝে থাকলে তিনি সকলকে পিছনে ফেলে জয় লাভ করতেন। কারন তার সেলোয়ারের ফিতা কাজ করত না। তিনি ফিতা খোলা সেলোয়ার পরিধান করে পঞ্চাশ বছর রাজনীতি করেছেন। বস্তা দৌড়ে তাকে হারানর মত কেউ বাংলাদেশে নাই।
বিশিষ্ঠ ইতিহাসবীদ সৈয়দ আবুল মকসুদ বস্তা দৌড়ের পরিবর্তে অনশন প্রতিযোগীতার দাবী তুলে বলেন, মন্ত্রী হওয়ার পর বস্তা নিয়ে আর কোন কারবার নাই। তখন বস্তা সামলায় এপিএস। কাজেই বস্তা দৌড়ের পরিবর্তে অনশন দৌড় আয়োজন করা হোক। যে সবচেয়ে লম্বা সময় না খেয়ে কাটাতে পারবে, তাকে রেল মন্ত্রী করা হোক।